মওদূদী 'ইসলামী রাষ্ট্র' ধারণার প্রবক্তা, যেখানে সার্বভৌমত্ব আল্লাহর এবং শাসনব্যবস্থা শুধুমাত্র শারিয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। তাঁর মতে, পশ্চিমা গণতন্ত্র ইসলামের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়, কারণ এটি ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে। মওদূদী তার 'ইসলামী রাষ্ট্র' বইয়ে শাসক হিসেবে মানুষের পরিবর্তে আল্লাহর হুকুম মানার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এই মতবাদে জনগণের ভূমিকা একটি 'খিলাফত' অর্থাৎ প্রতিনিধিত্বমূলক ভূমিকা পালন করা, যেখানে তারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে।
মওদূদী 'হাকিমিয়াহ' বা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ধারণা প্রণয়ন করেন, যেখানে আইন ও শাসনকর্তৃত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর হবে। তিনি 'জাহিলিয়াহ' শব্দটি পুনরায় ব্যাখ্যা করেন, যা তিনি আল্লাহর আইনবিহীন সমাজের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। তার 'ইসলামী রাষ্ট্র' এবং 'আল-জিহাদ ফিল ইসলাম' বইয়ে তিনি আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা এবং আধুনিক যুগের জাহিলিয়াহকে মোকাবেলা করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
মওদূদী জিহাদের ধারণাকে কেবলমাত্র সশস্ত্র সংগ্রামে সীমাবদ্ধ করেননি, বরং একে সমাজকে ন্যায়বিচার ও নৈতিকতার পথে পরিচালিত করার সংগ্রাম হিসেবে বর্ণনা করেন। 'আল-জিহাদ ফিল ইসলাম' গ্রন্থে তিনি জিহাদের বর্ধিত অর্থ—রাজনৈতিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টাকে অন্তর্ভুক্ত করেন, যা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। তিনি জিহাদকে কেবল যুদ্ধ নয়, বরং একটি নৈতিক ও দার্শনিক দায়িত্ব হিসেবে দেখিয়েছেন।
মওদূদী ইসলামী অর্থনীতির একটি নতুন মডেল উপস্থাপন করেন যা পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র উভয়কেই প্রত্যাখ্যান করে। তার মতে, অর্থনীতিতে সুদ নিষিদ্ধ এবং জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের পুনর্বণ্টন অপরিহার্য। 'ইসলামী অর্থনীতি' গ্রন্থে তিনি পুঁজিবাদী বাজারের অনৈতিকতা ও সমাজতান্ত্রিক সম্পদের জোরপূর্বক বণ্টনের মধ্যবর্তী একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রস্তাব করেন, যা ব্যক্তিগত মালিকানা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বাজারের নৈতিকতা বজায় রাখে।
মওদূদী তার লেখায় সুদের নিষিদ্ধতা (রিবা) এবং এর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন যেখানে লাভ-ক্ষতির ভাগাভাগি ও নৈতিক বাণিজ্যিক আচরণ প্রধান বিষয় হবে। তার 'ইসলামিক ইকোনমিক সিস্টেম' গ্রন্থে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ভিত্তিমূলক তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আজকের আধুনিক ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ভিত্তি।
মওদূদী আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষতার সমালোচনা করেন এবং ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা ধর্মীয় ও পার্থিব জ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। তার মতে, শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হলো একজন মুসলিমের নৈতিক ও আত্মিক উন্নয়ন, যা তাকে শারিয়াহ মেনে চলার যোগ্য করবে। তার 'ইসলামিক এডুকেশন' প্রবন্ধে তিনি ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
মওদূদী তার 'চার মূল কুরআনিক শব্দ' (ইলাহ, রব, ইবাদাহ, দিন) গ্রন্থে কুরআনের চারটি মৌলিক ধারণার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি 'ইলাহ'কে উপাস্য, 'রব'কে প্রতিপালক ও সর্বশক্তিমান, 'ইবাদাহ'কে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও সেবা এবং 'দিন'কে আল্লাহর নির্দেশিত জীবনব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই চারটি শব্দের ব্যাখ্যা তার ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শাসননীতির মূল ভিত্তি।
মওদূদী ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের (কল্প, নামায, রোজা, হজ ও জাকাত) ব্যাখ্যায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন, যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে এই স্তম্ভগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ইবাদতের মাধ্যম নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্র পরিচালনার একটি নৈতিক কাঠামো হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে জাকাতকে তিনি সম্পদের ন্যায্য পুনর্বণ্টনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে দেখেছেন।
জামাত-ই-ইসলামী ছিল মওদূদীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক মতাদর্শের বাস্তবায়নের প্রধান হাতিয়ার। তার মতে, একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল ইসলামী রাজনৈতিক দল প্রয়োজন। এই দলটি শুধুমাত্র রাজনীতিতে নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। মওদূদী 'ইসলামী রাষ্ট্র' ধারণার ভিত্তিতে এই সংগঠন গড়ে তোলেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন।
মওদূদী শিক্ষার মাধ্যমে ইসলামী পুনর্জাগরণে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি একটি ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন যা শুধুমাত্র ধর্মীয় জ্ঞান নয়, আধুনিক শিক্ষা এবং বিজ্ঞানকে ইসলামের আলোকে পরিবেশন করতে পারে। তার এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেখানে ইসলামী গবেষণা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সম্মিলন ঘটে।
তাফহীমুল কুরআন ছিল মওদূদীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কাজ। এটি কুরআনের একটি আধুনিক তাফসীর যেখানে কুরআনের শাব্দিক অর্থ এবং এর কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই তাফসীরটি শুধুমাত্র ধর্মীয়ভাবে নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। মওদূদী কুরআনের নৈতিক এবং সামাজিক নির্দেশনা তুলে ধরেছেন, যা ইসলামী সমাজের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৫৩ সালে, মওদূদী কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, যা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের পরিপন্থী বলে তার ধারণা ছিল। এই আন্দোলন পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার একটি বড় প্রচেষ্টার অংশ ছিল। মওদূদীর নেতৃত্বে জামাত-ই-ইসলামী এই বিষয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ করে। এই কারণে মওদূদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তা বাতিল হয়। এটি মওদূদীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সংকটের প্রতিফলন।
মওদূদীর লক্ষ্য ছিল তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং তাদের মধ্য দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তরুণরাই ভবিষ্যতের সমাজ গড়ার মূল কারিগর এবং তাদেরকে ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করা প্রয়োজন। ইসলামী জমিয়তে তালাবা এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামী আদর্শে প্রভাব বিস্তার করে।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর, মওদূদী সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি পাকিস্তানে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ রূপ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবেন। পাকিস্তানকে তিনি ইসলামের নামেই প্রতিষ্ঠিত দেশ হিসেবে দেখতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে এখানে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এই লক্ষ্যেই তিনি পাকিস্তানে স্থায়ী হন এবং তার রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজ চালিয়ে যান।
পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনের বিরুদ্ধে মওদূদী তার ইসলামী নীতির সাথে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিবাদ শুরু করেন। তিনি সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে গণতান্ত্রিক এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তার এই প্রতিবাদের কারণে ১৯৫৮ সালে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো কারাগারে যেতে হয়, যা তার রাজনৈতিক সংগ্রামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
মওদূদী ১৯৭২ সালে রাবিতা আল-আলম আল-ইসলামী (বিশ্ব মুসলিম লীগ) প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হন, যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। তার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের মুসলিমদের একত্রিত করা এবং তাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা।
মওদূদী 'জাহিলিয়াত' শব্দটি ব্যবহার করে প্রাচীন আরবের অজ্ঞতা ও নৈতিক অবক্ষয়কে বর্ণনা করেন এবং একে আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে তুলনা করেন। তিনি মনে করতেন, ইসলামের বিপরীতে দাঁড়ানো যে কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থা 'জাহিলিয়াত'-এর একটি রূপ। এই মতবাদ বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করে, বিশেষ করে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও শিক্ষা গ্রহণকারী মুসলিমদের মধ্যে। সমালোচকদের মতে, মওদূদীর এই বক্তব্য আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে ইসলামকে সাংঘর্ষিকভাবে দাঁড় করায়। মওদূদী তার তাফসীর 'তাফহীমুল কুরআন'-এ এবং 'আল-জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ' গ্রন্থে এই ধারণার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
মওদূদী বিশ্বাস করতেন যে ইসলাম শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের জন্য নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাও। তিনি 'ইসলামী রাষ্ট্র' বা 'খেলাফত' প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন, যেখানে আল্লাহর শাসন বাস্তবায়িত হবে। এই ধারণা তার গ্রন্থ 'ইসলামী রাষ্ট্র' এবং 'খেলাফত ও মুলকিয়াত'-এ উল্লেখিত হয়েছে। সমালোচকরা বলেছিলেন, তার এই ধারণা বর্তমান জাতিরাষ্ট্র ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে মওদূদী বলেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিষ্ঠা করবে এবং তা মানবজাতির জন্য কল্যাণকর।
মওদূদী তার গ্রন্থ 'পর্দা' (১৯৩৯) তে নারীদের জন্য ইসলামী পর্দার বাধ্যবাধকতা বর্ণনা করেছেন। তিনি নারীকে সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ করতে হলে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী আচরণ করতে হবে বলে মনে করতেন। সমালোচকরা বলেছিলেন যে, তার পর্দা-বিষয়ক মতবাদ নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকারের পরিপন্থী। কিন্তু মওদূদী এই সমালোচনার উত্তরে বলেন যে, ইসলামী পর্দা নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার জন্য এবং এটি নারী ও পুরুষের মাঝে নৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।
মওদূদী কাদিয়ানী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং তাদের অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন। তার মতে, কাদিয়ানীরা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের পরিপন্থী। এই কারণে তিনি কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন, যা তাকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মহলে বিতর্কের মুখে ফেলে। তার গ্রন্থ 'কাদিয়ানী সমস্যা' এবং বিভিন্ন প্রবন্ধে এই বিষয়ে তার সুস্পষ্ট অবস্থান পাওয়া যায়।
মওদূদী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে ইসলাম শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ধর্ম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা। তার মতে, ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়া উচিত এবং ইসলামী আইন বা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা উচিত। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি 'ইসলাম ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা' গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সমালোচকরা মনে করতেন, রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত করা সমাজকে উগ্রবাদী দিকে ঠেলে দেবে। তবে মওদূদী বলেন, ইসলামী শাসন মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে এবং এর মধ্যেই প্রকৃত ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
মওদূদী ব্রিটিশ শাসনের তীব্র সমালোচক ছিলেন এবং ভারতের মুসলিমদের ইংরেজদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালের পর, পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার ভূমিকা এবং মুসলিম লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক বিতর্কের সৃষ্টি করে। অনেকে মনে করতেন, তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরোধিতা করলেও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পর তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে। মওদূদী 'পাকিস্তান কি মআনা' গ্রন্থে এই বিতর্কের বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন।
মওদূদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করলেও ইসলামী নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসন, বিশেষত আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান এবং তার দল জামাত-ই-ইসলামীর নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিতর্কের জন্ম দেয়। সমালোচকরা বলেছিলেন, তিনি ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে মওদূদী বলেছিলেন যে, ইসলাম রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকা ছাড়া পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না এবং ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন।